সফল ব্যক্তি – পর্ব ০৩ ও শেষ পর্ব – শাহিদা আকতার জাহান

Oct 4, 2020 | আত্মউন্নয়ন ও মোটিভেশন | 0 comments

সফল ব্যক্তি – পর্ব ০৩ ও শেষ পর্ব
শাহিদা আকতার জাহান
——————————————

বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করে দেখেছেন সফল মানুষদের নিয়ে। মানুষগুলোর পেশা ভিন্ন, ভাষা, সংস্কৃতি, সব কিছু ভিন্ন, ভালোবাসার জায়গাগুলোও ভিন্ন। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে তাঁদের দারুণ মিল: তা হলো সফলতার ক্ষেত্রে কঠোর প্ররিশ্রম অধ্যাবসায় দৃঢ়তা আর সাধনা।

কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আপনি এমন অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারবেন– যা হয়তো আপনি নিজেও আশা করেননি। আপনি অনেকের মতো মেধাবী বা প্রতিভাবান হতে পারবেন না। কিন্তু আপনি চাইলেই সবচেয়ে বেশি পরিশ্রমী ব্যক্তি হতে পারবেন। এবং সেই পরিশ্রম দিয়েই প্রতিষ্টিত হয়ে নিজেকে অন্যায়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিভাবান, মেধাবী ও সুযোগ্য মানুষকে পেছনে ফেলে সেরাদের সেরা হয়ে উঠতে পারবেন।
মানুষ আমাকে আপনাকে আঘাত করতে পারবে, অত্যাচার চালাতে পারবে হিংসা করতে পারবে কিন্তু আমার আপনার মেধা-জ্ঞান-প্রজ্ঞা আর এগিয়ে যাবার চেতনা, সাহসিকতাকে কেউ চাইলে ও শেষ করে দিতে পারবে না।”

কিছু মানুষ আছেন যারা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে থাকেন।কল্পনাবিলাসীরা সবসময় অলীক কল্পনায় ডুবে থাকেন। তারা মনে করেন, সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়ান, এসে দেখে দাঁড়িয়ে আছে এক টুকরো হতাশার সামনে। তাই কল্পনাবিলাসীরা সব সময় কষ্ট পেয়ে থাকেন। অলীক কল্পনার জগত থেকে বের হয়ে এসে আপনাকে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে, কারণ বাস্তবতা অনেক কঠিন এবং জঠিল।

সব সময় মনে রাখতে হবে জীবনে ভালো কিছু সহজে আসে না অনেক দেরিতেই আসে। সাফল্য ধরা দিতে অনেক অনেক সময় নেয়। তাই বলে কখনো তাড়াহুড়ো করবেন না এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চেষ্টা করুন। নিজের খারাপ সময়গুলোকে থেকে শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করুন। এই খারাপ সময়ের শিক্ষাটা হবে আপনার জীবনের সব চেয়ে বড় শিক্ষা। কারণ এটাই হয়ে উঠবে আপনার জীবনের জন্য সফলতার গল্প। জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য হোঁচট খাওয়া একটা বড় শিক্ষা। হোঁচট খেলে আপনার আত্মবিশ্বাসের জায়গাটি আরও শক্তিশালী হবে আপনার জায়গাটা অনেক বেশি মজবুত হবে। আপনি নিজে নিজ শক্তিতেই উঠে দাঁড়াতে পারবেন। আপনি নিজেকে এমনভাবে তৈরি করুন, যেন সবসময় অন্যদের কাছে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী দেখায়। যখন কেউ নিজেকে ভালভাবে জানে, তখন সহজাতভাবে নিজের আত্মবিশ্বাসের জায়গাটি আরও বেশি মজবুত হয়।

“সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে হয় ধাপে ধাপে, একটু একটু করে। সেজন্য ছোট কিন্তু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয়। কেবল আমি ডাক্তার হবো!” এমন ভাবলেই তো কাজ হবে না! ডাক্তার হতে হলে কী কী করতে হবে সেগুলো ঠিক করতে হবে। ডাক্তার হতে গেলে পরিশ্রম করতে হবে, ভালোভাবেই লেখা-পড়া করতে হবে। প্রতিদিনের পড়াটা প্রতিদিন শেষ করতে হবে। এভাবে সুনির্দিষ্ট ছোট্ট ছোট্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেলে বড় লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে করতেই আপনার লক্ষ্যে সাফল্যের দেখা পেয়ে যাবেন।

আপনি হয়তো ভাবছেন, ক্লাসের সেরা ছাত্রটি কতই না মেধাবী, কতই না ভাগ্যবান! সে সব চাইতে বেশি নন্বর পায়, আপনি কি একবার ও চিন্তা করেছেন সে এই অবস্থানে পৌঁছাতে, ক্লাসে প্রথম হওয়ার জন্য তাকে যে কত নির্ঘুম রাত পাড়ি দিতে হয়েছে,কতো কষ্ট কতো পরিশ্রম করতে হয়েছে কতো সাধনা করে হয়েছে? তার খবর ক’জনে রাখি? না মোটেই রাখি না, আমরা শুধু বলতে পারি সবাই, করতে সবাই পারি না।
ভাগ্যের কিছু ব্যাপার আছে তা আমি মানি, তবে প্রস্তুতি ছাড়া, অধ্যাবসায় ছাড়া, পরিশ্রম ছাড়া ভাগ্য দিয়ে সাফল্য মেলে না।

কিছু বিশেষ মানুষ ছাড়া কম -বেশি প্রতিটি মানুষেই আসলে পরিশ্রম করার ক্ষমতা রাখে। কিছু অতি সাধারণ উপায় অবলম্বন করেই প্ররিশ্রম, জ্ঞান ক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়। আর সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারলে যে কোনও সাধারণ মানুষই অসাধারণ মানুষ হয়ে ব্যক্তি জীবনে সমাজ জীবনে প্রতিষ্টিত হতে পারে। এভাবে সব সময় একেবারে সাধারণ মানুষগুলো অসাধারণ সফলতা লাভ করেন সমাজে প্রতিষ্টিত হয়।

মার্কিন লেখক মেশেল লোরি বলছেন, একজন মানুষ সব সময় একই রকমভাবে সফল হবে না, সেটা সম্ভব নয়। আর সফল হতে না পারলে মুষড়ে পড়ার কিছু নেই। কিছু নিদিষ্ট সিদান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

বড় কাজগুলোকে ছোট ছোট কাজে ভাগ করুন আপনি যখন খুব বড় কোনও কাজ করবেন তখন আপনার মস্তিষ্কে এমনিতেই চাপ পড়ে। মনের উপর চাপ পড়ে, এমন কি দেহের উপর ও চাপ পড়ে। তাই মস্তিষ্কের একটি ভালো দিক হল, এটি সব সময়ে আপনাকে কঠিন কাজ করা থেকে রক্ষা করতে চায়।ভালো রাখতে চাই। সে যদি দেখে যে আপনার সামনে বিশাল একটি কাজ আপনি তা নিয়ে মানসিকভাবে চিন্তিত তাহলে সে আপনাকে মনের অজান্তে বার বার মেসেজ পাঠাবে যে, আপনার এখন বিশ্রাম নেয়া উচি‌ৎ। শরীর এমন একটা জিনিস আপনি না চাইলেও শরীরের কারণে কিছু কাজ করার পরই আপনাকে একটু বিশ্রাম নিতে ইচ্ছা করবে। এর কারণ আপনার মস্তিষ্ক চাইছে আপনি কাজ থেকে দূরে চলে যান।মস্তিষ্কের এই বৈশিষ্টের কারণে আমরা অনেক সময়েই ইচ্ছা থাকার পরও সব সময় কঠোর পরিশ্রম করতে পারি না। গবেষণায় দেখা গেছে, একই সময়ে একটির বেশি কাজে ফোকাস করলে মস্তিষ্ক কোনও কাজেই ঠিকমত ফোকাস করে না। সেইসাথে শরীরেও দ্রুত ক্লান্তি চলে আসে। তাই ঘুম থেকে উঠে সকালে কঠিন কাজগুলো করতে হবে, ভোরবেলায় মানুষে মস্তিষ্ক থাকে ক্ষুরধার, মন থাকে সতেজ। সূর্য উঠার পর পরই কাজে নেমে পড়লে ঘুমন্ত পৃথিবীর থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকা যায় প্রতিযোগিতায়, সফল মানুষরা এই সুযোগ কখনো হাত ছাড়া করেন না তাই তাঁরা ভোর বেলাতেই মজার আরামের ঘুমকে ছুটি জানিয়ে নেমে পড়েন নিজ কর্মপরিকল্পনায়।
সফল বা প্রতিষ্টিত হওয়ার জন্য জীবনের সিদ্ধান্তগুলো সঠিক সময়ে সঠিকভাবে নেয়াটা অনেক বড় একটি কাজ। আর এই কাজটি করতে কোনো প্রকার দ্বিধাবোধ করবেন না। নিজের জীবন সম্পর্কে বেশ সচেতন থাকুন।

কোন কাজ ভাল হবে, কোন কাজ মন্দ হবে এই বিষয়ে সব সময় সচেতন থাকুন। সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত জীবনের বিফলতা অনেক কমিয়ে দেয়। একটি ভুল সিদ্ধান্ত সারা জীবনের কান্নার কারণ হতে পারে, সারা জীবন অনুতপ্তের কারণ হতে পারে, সফলতার দুয়ার থেকে জীবনকে অনেক পিছনে ফেলে দিতে পারে। তাই ধীর চিন্তায় শান্ত মেজাজে সঠিক সিদ্ধান্তটা নিয়ে সুন্দর জীবন গড়ে তোলার কাজে নেমে পড়ুন। সময়ের কাজ সময়ে করুন। সময়, বয়স, সামর্থ এমন জিনিস নিদিষ্ট সময়ের পর আর থাকে না। জীবন আপনার, সিদ্ধান্তটাও কিন্তু আপনাকেই, নিতে হবে সফলতাও আপনারই হবে।সমাজে সুনাম আপনিই অর্জন করবেন। ভাল কথা, ভাল উপদেশ কখনোই পুরনো হবার নয়।

তাই সফল মানুষদের এ অভ্যাসগুলো ধারণ করে নিজের ভেতর, ছড়িয়ে দিয়ে পড়ার প্রতিবেশী বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে উৎসাহিত করুন, সবাইকে নিয়ে একসাথে এগিয়ে যাওয়া মানে শফলতার দ্বার খুলে যাওয়া।বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আপনার আমার এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে।মনে রাখতে হবে ভালো কথা, ভালো উপদেশ কখনো পুরানো হবার নয়।

—-
শাহিদা আকতার জাহান
সদস্য, জেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম
নির্বাহী সদস্য, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ
সিনিয়র সহ-সভাপতি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগ।
সভাপতি, চট্টগ্রাম দুঃস্থ কল্যাণ সংস্থা

লেখাটি লিখেছেন