বিশ্বজগত চিনুন, নিজেকে চিনুন

Oct 29, 2021 | গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস | 0 comments

বিশ্বজগত চিনুন,
নিজেকে চিনুন

——

আপনি যখন ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০/৩০ গজ উপরে উঠবেন, তখন শুধু আপনার ভবনের ছাদই দেখবেন।
আপনি যখন ১০০ গজ উপরে উঠবেন, তখন অনেক বাড়ি ঘর দেখতে পারবেন। তখনকার অনুভূতি কিছুটা বেশি রোমাঞ্চের হবে। আপনি যখন কয়েক শত গজ উপর উপরে উঠবেন, তখন পুরো একটা এলাকা বা শহর দেখতে পারবেন।
তখন সৃষ্টির বড়ত্ব এবং আপনার নিজের ও নিজের সাম্রাজ্যের ক্ষুদ্রতাও কিছুটা অনুভব করবেন।

আপনি যখন হাজার গজ উপরে উঠবেন, অনেক বড় এলাকা আপনার কাছে ক্ষুদ্র খেলাঘর মনে হবে। বড় বাড়ি আপনার কাছে বাচ্চাদের খেলনার ঘর মনে হবে। তখন হয়তো বুঝবেন, আপনি তো তেমন কিছুই না।
আপনি যখন মিলিয়ন গজ উপরে মহাকাশে উঠার সুযোগ পাবেন বা আরো উপরো, তখন পুরো পৃথিবী হয়তো মানচিত্রের ছোট আকারে ধরা দিবে। তখন “আপনি” নিজের কথা তো বাদই দিবেন, পুরো পৃথিবীর কথাই ভুলে যাবেন; কারণ পৃথিবীর চেয়েও বড় গ্রহের সামনে পৃথিবীকে আপনার ক্ষুদ্র গোলকই মনে হবে। এবার আপনি সৃষ্টির কথা না ভেবে হয়তো সৃষ্টিকর্তাকে ভাববেন। ভাববেন, হে প্রভু, তোমার সৃষ্টি কত বড়! না জানি তুমি সৃষ্টিকর্তা কত মহান! সুবহানআল্লাহ আপনার প্রতি বাক্যের অনুসর্গ হবে।

আপনি যখন তারও উপরে ভাববেন, তখন সৌরপরিধির উর্ধ্বে ভাবতে হবে। তখন মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি দেখা যাবে। আর এই এরিয়াতে সহস্র বিন্দুকণা বা ডটের একটি হল আমাদের পৃথিবী। এবার পৃথিবীকেই আপনার শষ্যদানা মনে হবে! কী বিচিত্র!
আমাদের এই গ্যালাক্সির এক কোণা থেকে আরেক কোণায় যেতে প্রায় এক লক্ষ আলোকবর্ষ লেগে যাবে। আর আমাদের এই গ্যালাক্সি প্রায় ১০ হাজার কোটি গ্রহ এবং নক্ষত্র দিয়ে ভরা। ইতিমধ্যে আপনার মাথা কিছুটা ঘুরে যাবার কথা। যেমন, সারাদিন কম্পিউটারে চোখ রাখার পর বাইরে আকাশের দিকে তাকালে আপনার চোখ বড় হতে চায় না, তার চেয়েও বেশি।

আপনার এখন মনে হতেই পারে এই গ্যালাক্সি বিশাল বড়। কিন্তু না, মহাবিশ্বের তুলনায় আমাদের গ্যালাক্সি কিছুই না। যদি এই মিল্কিওয়েকে জুম আউট করেন, দেখবেন, লোকাল গ্রুপ অফ গ্যালাক্সি, যেখানে মিল্কিওয়ের মত প্রায় ৫৪ টি গ্যালাক্সি আছে। এটা এতই বড় যে এর এক কোণা থেকে আরেক কোণার দূরত্ব হলো প্রায় ১০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ।
সেদিকে আর না যাই। কষ্ট করে পৃথিবীতে পা রাখুন। আবারো।
নিজের গ্রামের বাইরে গেলে আপনার গ্রামের মানুষ পেলে নিজের মনে হয়। উপজেলার বাইরে গেলে নিজের উপজেলার মানুষকে আপন ভাবেন। স্বাভাবিক। জেলার বাইরে গেলেও নিজ জেলার মানুষকে খুব আপন মনে হয়। বিদেশে গেলে স্বদেশি কাউকে পেলেই হয়। যেন কত আপন! তখন আপনার ভাবনায় আসেনা, তার গ্রামতো আমাদের টা না, তার জেলাও তো আমাদের জেলা নয়। সে তো আমার রাজনৈতিক দলের নয়। সে তো আমার ধর্মের নয়। সে আমার বর্ণের নয়। সে আমার আক্বিদার নয় ইত্যাদি। তখন আপনি এ ভেবেই খুশী হন যে, এ লোক আমার দেশের লোক। আমার আপন।
আপনি মহাদেশ অতিক্রম করলে নিজের মহাদেশের মানুষকেও কাছে ভাবতে থাকবেন। যেমন, আমেরিকায় গেলে আপনি এশিয়ান কাউকেও স্বদেশির চেয়ে কোন অংশে কম ভাবেননা।

সুতরাং উপর থেকে দেখুন। কোন ভেদাভেদ নেই। আপনার পৃথিবীর বড়ত্ব নিয়ে যা ভেবেছিলেন, তা মিথ্যে মনে হবে। তখন ভাববেন, এ পৃথিবীই যেখানে মহাবিশ্বের তুলনায় শষ্যকণাও না, সেখানে আপনি কে? আপনি কী?
আপনি নিজের জগতকে সংকীর্ণ করে ফেলুন। দেখবেন, ১০ বর্গফুট জায়গাও আপনার কাছে অনেক কিছু। বিশাল সম্পদ সম্পত্তি।
আপনি মহাবিশ্বের অধিবাসি ভাবুন। দেখবেন, এ দেশ নয়, পৃথিবী নয়, এ সৌরজগতই খুবই ক্ষুদ্র, আপনার বিশ্বের কাছে। তখন, মন্যতা “হীন” হবে না। মনে হবে, এ বিশাল ভবে আপনি কদিনের জন্য বেড়াতে এসেছেন। যেমনটি মহাকালের তুলনায় এ আয়ুষ্কালের ক্ষুদ্রতা..

আপনি মহাজগত বা মহাকালের পরিসীমা নির্ধারণ করতে পারেননি। মানে, ভাজ্য খুঁজে পাননি। ভাজক দিয়ে কী হবে? নিজের ক্ষুদ্রতা আবিষ্কার করতে পারবেন তখনই যখন সৃষ্টিতর বিশালতা সম্পর্কে কিয়দাংশ জানা যাবে।
তখন, আপনার নিজের ‘বড়ত্ব’ বা মহত্ত্ব নিয়ে না ভেবে, নিজেকে বৈশ্বিক নাগরিক, মহাজগতের বাসিন্দা, মহাকালের সাময়িক যাত্রী ভাবুন, তখন সৃষ্টিকর্তার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করবেনই, বরং খুব অস্থায়ী কিছু মালিকানা বা দখলদারিত্ব (সম্পদ বা সম্পত্তি বলছিনা) নিয়ে, নিজের দম্ভ, অহংবোধ, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা, লোভ, লোকদেখানো ইত্যাদি ভুলে নিজেকে চিনতে পারবেন কিছুটা। সক্রেটিস যা Know thyself দিয়ে বুঝিয়েছেন, তার কিছু শতাব্দি পর ইসলাম তা ‘যিনি নিজেকে চিনেছেন, তিনি স্রষ্টাকে চিনেছেন’ দিয়ে বুঝিয়েছেন।

চলুন, নিজেকে চিনি।


মোঃ নাজিম উদ্দিন
২৯ অক্টোবর, ২০২১

লেখাটি লিখেছেন