দাও ফিরে হে অরণ্য!

Jul 1, 2021 | ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি-রাজনীতি | 0 comments

Post View : 2
 

দাও ফিরে হে অরণ্য!

বর্ষণ তুঙ্গে। চারদিকে প্রচন্ড বৃষ্টি, চট্টগ্রাম নগরে আমার চারপাশে।
ঠিক এমনই মুহুর্তটা আন্দোলিত করলো আমার সকল শৈশব-স্বত্ত্বা-স্মৃতিকে।

খুব বৃষ্টিতে জালসহ মাছ ধরার আরো উপকরণ (গ্রাম্য ভাষিয় চা-ই, টেইয়্যা জাল, লুই) ইত্যাদি নিয়ে ছবির শিশু-কিশোরের মতো আমরাও ছুটতাম বিলে-ঝিলে!
মাথায় কখনো ছিলো ছাতা, বেশির বাগ সময়ে ছিলো ”জুউইর”…
(চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যা বলা হতো)

খুব বজ্রপাত হলে কই মাছের স্থলের
দিকে “উজান” বেয়ে উঠা এবং তা ১/২ করে ধরে সংগ্রহ করার কথাও কি ভুলে যাওয়ার মতো!

তবে এ ঘোর বৃষ্টিতে ভিজার সময় আমাদের বাবা-মা বা দাদা-দাদীদেরও বিশ্বাস ছিলো- এতে ব্যামো, রোগ ব্যাধী হওয়ার আশঙ্কা খুব কম, নইলে এ যুগের শহুরে অভিভাবকের কাছে এমন বোকার মতো বৃষ্টি-বিলাস অলিকই ঠেকবে!

বেশি বন্যা না উঠলে এ ঘোর বর্ষায় ছিল ফুটবল- অনেকে দুষ্টুমি করে ”ফাইন্যা খেলা”ও বলতো!

বিশুদ্ধ পানির উৎস খুব দূরে না হলেও বৃষ্টিতে টিউব ওয়েল যে ক’টা ছিলো তা হয়তো ডুবে যেত বা ততদূর যাওয়া কঠিন হতো- তাই ছাদের পানি পড়ার ঠিক নিচে কৌশলে কলসি বসিয়ে পানি সংগ্রহ করা হতো! তবে চাকনি দিয়ে কিছুটা পরিষ্কার করা হতো!

নৌকা থাকুক, ভালো, না থাকলে কলাগাছের তৈরি ভেলা দিয়ে, গাছের তৈরি বৈঠা দিয়ে বানের পানিতে ভ্রমণে বের হওয়ার সে দুরন্তপনা কীভাবে ভুলে যাই?

বর্ষার ছবিগুলো আমাদের, আর যারা গ্রামে থাকে, ছিলো, তাদের প্রচন্ড টানে, প্রচন্ড; এ টানে হয়তো খুব বেশি মাচ ধরার লোভ বা পাগলামি আছে তা বলছিনা- কিন্তু এ টানে এক নস্টালজিক শৈশব-কৈশোরকে ফিরে পাচ্ছি মুহুর্মুহু;

শ্বেত পাথরের এ কৃত্রিমতা কখনো এভাবে টানবেনা অন্তত আমরা যারা গ্রামেই গোড়াপত্তন, তাদের;

যেন কবি সে আক্ষেপেই, সে স্মৃতিকাতরতা নিয়েই বলেছিলেন-

‘দাও ফিরে হে অরণ্য
লও এ নগর’…

———-

মোঃ নাজিম উদ্দিন
০১-০৭-২০২১