রম্যভাবনাঃ পাঠাও, হাঁটাও আর ভাসাওয়ের যুগে আমরা!!

Sep 12, 2020 | গল্প প্রবন্ধ উপন্যাস | 0 comments

Post View : 5
 

যাদের ছোটবেলা গ্রামে কেটেছে, তাদেরই বুঝতে বেশি সহজ হবে। আমি তখন ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়ি। চাষাবাদ ছিল আমাদের। দক্ষিণ বিলে আমাদের পাশের জমি চাষ করতেন গ্রামের এক দাদা। তিন ছেলে তার। একজন বিদেশ। দেশের দুই ছেলের একজন তার কথা শুনতে চায়না। অনেক অভিযোগ। তাদের পরিবারের আর্থিক সংস্থান করে প্রবাসী ছেলেটা। সব অভিযোগ তিনি তাকেই জানাবেন। কিন্তু উপায়? বৃদ্ধ দাদা লিখতে জানতেন না। তখন অডিও ক্যাসেট রেকর্ড করেও দেশ বিদেশের যোগাযোগ চলত। কিন্তু বৃদ্ধ ভাবলেন, রেকর্ডের সময় পাছে কেউ অর্থাৎ বাকি দুষ্টু ছেলেরা শুনে ফেলবে! ভাবলেন, চিঠি লিখে ডাকে কোনো এক রানার দিয়ে পাঠাবেন ছেলের কাছে।
একদিন আমাদের আঙিনায় হাজির। আমাকে দিয়ে চিঠি লিখাবেন! সে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা! শুরু হলো শ্রুতিলিপি। আবেগ, রাগ ক্ষোভের সে কী অভিব্যক্তি! মাঝে মাঝে অবাধ্য ছেলেটার নাম ধরতেই গালি দেন। আমি বলি, এগুলো চিঠিতে লিখা যায়না!…. এবার বিদেশ থেকে পুত্রের চিঠি আসলেও চলে আসতেন আমার কাছে। অনেক আগ্রহে। পড়ে শুনাতাম। তার চোখে পানি আসতো। তিনি কাঁদতেন। আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিতাম। মনে মনে বলতাম, পাগল নাকি! ছেলের চিঠি পেয়ে এভাবে কাঁদে কেউ? তিনি আমার মুখের অভিব্যক্তি বুঝতেন। বলতেন, যেদিন বাবা হবি, সেদিন বুঝবি।

বলছিলাম আজ থেকে প্রায় ২৪/২৫ বছর আগের সামাজিক যোগাযোগের কথা, মাধ্যমের কথা!
আজ দেশ অনেক উন্নত; আরো সমৃদ্ধির পথে…সেকালের কথাগুলো কিংবা মোবাইল ফোনবিহীন আমাদের জীবনের প্রথম ২৩/২৫ বছরের কথা কেউ বিশ্বাস করার সুযোগ নেই!

আজ প্রযুক্তি উৎকর্ষের চরম শিখরে; সমস্যা সৃষ্টির সাথে সাথেই আনছে নব নব উদ্ভাবন! নিজের মোটর বাইক বা কার না থাকলেও নিজ খরচে “Uber” বা “পাঠাও” নামক অভিনব App দিয়ে জীবনযাত্রা করেছে অনেক সহজ।
তেমন কিছু ভাবনা অতীতের সাথে বর্তমানের যোজন দূরত্ব আনে মনে!

ভাবুনতো, সেদিনের চিঠি লেখা কাজকে আজ কি নাম দেয়া যেতো -হতো “লিখাও” নামে কোনো App দখল করে নিত বাজার! আর পড়ার সময়? “পড়াও” নামের কোনো app হয়ত সামনে হাজির হতো!

রাস্তায় পানি? অনেক দূর যেতে চাইলে হয়তো নৌকা বা স্পিডবোটের মতো “ভাসাও” নামের কোনো app আপনার দরজায় কড়া নাড়বে! গলির মুখে ২০/৩০ হাত জায়গায় হাঁটু পানি! ভাবছেন, এই সামান্য পথ পাড়ি দিলেই বাঁচি! হয়তো সুঠাম কোনো তরুণ “কাঁধে Uthao” কিংবা “হাঠাও” কোনো app এর পক্ষে এসে আপনাকে কাঁধে তুলে পর করে দিবে সাশ্রয়ে!

মন খারাপ? একদিন আপনার মোবাইলে add আসবে “হাসাও” নামের কোনো app এর- ১০ মিনিটে হাসিয়ে মন ভালো করার নিশ্চয়তাও দিতে পারে!
অনেক যাত্রার ক্লান্তিতে কোথাও বিশ্রাম চান? হয়তো যাত্রী ছাউনির অবয়বে “জিরাও” সার্ভিস আপনার ক্লান্তি দূর করবে! সাথে থাকতে পারে বিনোদনও!
আরো গোপনীয় কিছু কাজও যে হবেনা, তা নয়! কারো উপর দীর্ঘদিনের রাগ/ ক্ষোভ? নিজে পিঠাতে পারছেন না? হয়তো “pithao” app আপনার কাজটি করে দিতে পারে!!
কিংবা বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে বা খাওয়াতে কষ্ট হলে চলে আসতে পারে “Ghumao” বা “খাওয়াও” নামক app!

আরো অলস হলে, কোন কাজে কি app লাগবে, তা নির্ধারণ করতে হয়তো চলে আসবে “বাছাও”…যেমন youtube এর কোন ভিডিও সবচেয়ে বেশি searched বা viewed হয়েছে, তা জানাতে ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে Toptube!

ও, হে, ভাবনার প্রয়োজনে কেউ ভাবতে পারেন “ভাবাও” সার্ভিস নিয়েও!!!

ভাবুন, অলস হলে আখেরে ভালোই হয় দেখি!! কি বিচিত্র!

#রম্য-ভাবনা!


মোঃ নাজিম উদ্দিন
nazim3852@gmail.com
১১/০৮/২০১৮