আজকের ভাবনা: ‘থিংক আউট অব দা বক্স’

Sep 7, 2020 | তারুণ্য, ক্যারিয়ার, সাফল্য | 0 comments

এলাকার ‘হাবা’মার্কা চেহারার যে কিশোর বা তরুণকে আপনি চেনার চেষ্টাই করেননি কখনো, সে একদিন তার ব্যক্তিগত জীপগাড়ি হতে নেমে আপনাকে সালাম দিয়ে তার পরিচয় দিয়ে, তার ভিজিটিং কার্ড হাতে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় যতটা না চমকে গেলেন, তার চেয়ে বেশি চমক দিবে ভিজিটিং কার্ডে যখন তার নামের নীচে একাধিক পদ-পদবী দেখবেন- সি,ই,ও, এম,ডি ইত্যাদি শব্দাবলী!

বিষয়টা আপনাকে দু’বার পড়ে বিশ্বাস করতে হচ্ছে! ঘটনা কিন্তু সত্যি। ভুল শুনেন নি; আপনার বাড়ির পাশের প্লট টা সে-ই কিনেছে। একটি ওয়েবসাইট বা ইউটিউব একাউন্ট কিংবা পাঠাও ধৰ্মী এপস উদ্ভাবন করে কোটিপতির তালিকায় নাম লেখানো এদেশের যুবকদের বয়স ২০/২৫ এর মধ্যেই! বিচিত্র মনে হয়?!

‘এমন অনেক কিছু হবে, যা কেউ ভাবেনি আগে’- সময়ের দৌঁড়ে কে কোথায় গিয়ে পৌঁছতে পারে, তা তার গতির উপর নির্ভর করে: নির্ভর করে তার বর্তমান পরিকল্পনা আর কর্মনিষ্টার উপর, সে দেখতে কেমন ছিল, কোন বংশের লোক ছিল সে বিষয়গুলোর উপর নয়। আপনি দৌড়ছেন না বলে মনে করবেন না অন্যেরা বসে আছে!

ল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী শেষ করে যুগ অনুযায়ী বেতন পেয়েস্কু যে এতদিনে শহরে ব্যাচেলর বাসা ছেড়ে ফ্যামিলি বাসা নিয়ে কোনো রকমে আছেন মনে করছেন, সে কিন্তু এখন তার ব্যবসায়িক সাফল্যের চুড়ায়; ভেবেছিলেন তার এতদিনে পাঁচ অংকের বেতনে চাকরি করার কথা, কিন্তু সেই তরুণ উদ্যোক্তার প্রতিষ্টানে অনেকেই চাকরি করে স্ব-নির্ভর হয়ে বেশকয়েকজন মাস্টার্স ডিগ্রিধারীর employer বা  CEO।

হাতে সি, ভি বা বায়োডাটা কিংবা আবেদনপত্র নিয়ে ফরমাল শার্টে অগণিত চাকরির ইন্টারভিউ দেয়া উচ্চশিক্ষিত যুবক তখনও অনলাইন আর অফলাইনে আবেদনের সেঞ্চুরি পূর্ন করতে ব্যতিব্যস্ত;
”চাকরিটা আমি পেয়েগেছি বেলা শুনছো/ এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা” – শিল্পীঅঞ্জন দত্তের গানটা তার পুরোপুরি গাওয়া হয়না! বরং হানিফ সংকেতের প্যারোডি যেন তার নিত্য কুহুগান- “বিআরটিসি-তে করে দেখো ওই যুবক যায়,
চাকরির খুঁজে হায় চোখ দুটো উতলায়, চাকরি নাই, হায় চাকরি নাই…”

আর পড়নে জিন্সের প্যান্ট, ক্যাজুয়াল ড্রেসে কাঁধে ল্যাপটপের ব্যাগ নিয়ে বন্ধুর সাথে ওয়েবসাইট বা youtube এ কিংবা ফ্রী ল্যানসিং বা আউটসোর্সিং  এর কাজের কথা বলে যে ছাত্র-কাম-বেকার কোথায় জানি কি করতো শুনে হেয় করতেন, তার প্রতিদিনের আয় শুনে চমকে যাবেন না তো? তার অধীনে যারা কাজ করে, সে সব শিক্ষানবিশের মাসে আয় ছয় অংকের ঘর পর হয়েছে অনেক আগেই। মানুষের নিত্য নতুন সমস্যা থেকে উত্তরণের নতুন আইডিয়া দিয়ে মানুষের কল্যাণ আর নিজের আয়ের অংক বাড়ে বহুগুণে..

সবেমাত্র এইচ,এস,সি বা ডিগ্রি পাস কোর্স শেষ করে কয়েকটি গরু বা দুটা পুকুর নিয়ে ‘এগ্রো’ ব্যবসা কিংবা টেকনিক্যাল লাইনে পড়ে স্বনির্ভর  যুবক যখন বয়স ৩০ বছর পূর্ন হতেই মাসে ছয় অংকের অনেক উপরে আয় করেন, তখন অনার্স মাস্টার্স আর আরো সময় নিয়ে একটা “এমবিএ” করে চাকুরীর মরিচিকায় বয়স চাকুরীতে যোগদানের বয়সসীমা বাড়ানোর অপেক্ষায়!
তবু টাই-সু পড়ে “এসি” অফিসে বসে “কর্পোরেট” জগতে প্রবেশ করাই চাই। আজ সপ্তাহান্তে ঢাকামুখী সহস্র চাকুরী প্রত্যাশীর নির্ঘুম মিছিল!

অন্যদিকে মহান পেশা শিক্ষকতায় বেতন কমের অজুহাতে আবেদন করেননি প্রথমে; খবর নিয়ে দেখেন, স্বাস্থ্য, অবসর সময়ের উপস্থিতি, সম্মান ইত্যাদি যোগ করলে অর্থনীতির ছাত্ররা ভালো বলতে পারবেন, প্রকৃত অর্থে, জীবনে “আর্থিক মজুরি”র চেয়ে “প্রকৃত মজুরি” অনেক বেশি মূল্যবান। নয় কি?

শুধু রোজগার করাই পড়াশুনার একমাত্র না হোক;
কোন বিষয়ে পড়লে কোন পেশায় বা কোন পদে সম্ভাবনা রয়েছে-তা জানানো হোক শিক্ষার্থীদের;
সমসাময়িক ক্যারিয়ার trend নিয়ে আলোচনা হোক ডিগ্রী বা মাস্টার্স এর ক্লাসগুলোতেই।

উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করলে চাকুরী করতেই হবে- এই বিভ্রাট থেকে মুক্ত করা হোক আমাদের ছাত্র সমাজকে;
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সহজতর করা হোক পথচলা;
বিয়ের বাজারে “একজন চাকুরিজীবি হলে হবে” বা সরকারি চাকুরির কদর বেশি-  মর্মে যে সমাজ-চাপ- তা থেকে মুক্ত করা হোক যুবকদের…

আর প্রাতিষ্ঠানিক পড়ার বাইরে নিজেকে যোগ্য করার তাগিদ আসুক গড্ডালিকা প্রবাহে নিরন্তর ছুটে চলা যুবকদের;
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেক্টর-প্রয়োজনীয়তা জেনে, knowledge এর পাশপাশি skill বা দক্ষতা অর্জনের আবশ্যকতা তৈরী হোক শিক্ষিত সমাজের মধ্যে; লেট রলেজ রুল দ্যা ওয়াল্ড, এজ অলওয়েজ..

প্রথাগত পদ্ধতির বাইরে শিক্ষার ক্ষেত্রে আবশ্যক করা হোক টেকনিক্যাল, সময়োপযোগী ক্রেডিট, বিষয় বা অধ্যায়;
সর্বোপরি, বাঁচার জন্য ক্যারিয়ার, ক্যারিয়ারের জন্যই বাঁচা নয়-
এ উপলব্দি জাগ্রত হোক রাতজাগা গড্ডালিকায় কর্মসংস্থান প্রত্যাশীদের।

Seriousness নয়, sincerity-ই হোক আমাদের ধ্যান।
বক্সের বাইরে চিন্তা করুন,
The world is much bigger than you have anticipated, ney, imagined…
And knowledge rules the world, always

——

মোঃ নাজিম উদ্দিন
nazim3852@gmail.com

লেখাটি লিখেছেন